বর্ষায় প্লাস্টিকের কাপে চারা তৈরি
সরাসরি জমিতে বীজ ফেলে দিলেই সব সব্জি চাষ হয় না। ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, লঙ্কা, টমাটো, বাঁধাকপি বা অন্যান্য অসময়ের সব্জি চাষে রীতিমতো বীজতলা বানাতে হয়। উঁচু জমিতে বীজতলা করলেও অনেক সময় হয়তো এমন বৃষ্টি হল যে, সেই উঁচু জমিও জলের তলায়। শেষমেশ কষ্টে তৈরী করা বীজতলার পুরোটাই সলিল সমাধি।
সমস্যা সমাধানে প্লাগ ট্রে-তে চারা তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিশেষঞ্জরা।
<h3 style="color:seaGreen">প্লাগ ট্রে কাকে বলে?</h3>
এটা একটা প্লাস্টিকের ট্রে। যাতে ছোট ছোট টবের আকৃতির খোপ বা প্লাগ থাকে।
প্রতিটি প্লাগের তলায় জল বেরিয়ে যাবার জন্য একটি বা দু'টি করে ছিদ্র থাকে। সব্জির চারা তৈরির জন্য যে প্লাগ ট্রে ব্যাবহার করা হয়, তাতে 98-104 টি খোপ থাকে। এই ট্রে-টি লম্বায় দু'ফুট ও চওড়ায় এক ফুট। প্লাগ-ট্রে না পেলে সাধারন প্লাস্টিকের চায়ের কাপ বা মাটির ভাঁড়েও বীজতলা বানানো যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে কাপ বা ভাঁড়ের তলায় যেন ছিদ্র থাকে।<h3 style="color:seaGreen">মাটি নয়, গ্রোথ মিডিয়াম</h3>
বিশেষত্বটা আসলে আধার নয়। ভিতরের বস্ততে। প্লাগ ট্রে-র খোপগুলোতে মাটি না দিয়ে চারা তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের সার (গ্রোথ মিডিয়াম) দেওয়া হয়। যুক্তি হল, মাটি ব্যবহার করলে জল সেচে তা ভারী হয়ে জমে যায়। ফলে অঙ্কুরোদগম ও চারা বৃদ্ধিতে দেরি হয়। গ্রোথ মিডিয়ামের অন্যতম উপাদান কোকো পিট। নারকেল দরি তৈরির সময় যে গুঁড়ো পাওয়া যায়, সেটিই কোকো পিট। নারকেল ছোবড়া বিশেষ পদ্ধতিতে গুঁড়ো করেও কোকো পিট বানানো যায়। ব্যবহারের আগে এটি শোধণ করে নিতে হবে। প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম (1g) হিসাবে কার্বেন্ডাজিম (carbendazim), 50% ডব্লুপি (WP) গুলে নিয়ে তাতে কোকো পিট চুবিয়ে নিলেই শোধণ হয়ে যাবে। কোকো পিট তৈরির ব্যবস্থা না থাকলে এটি কিনে নিতে হবে।
চারা তৈরির সময় একটি প্রাত্রে কোকো পিট (coco peat) নিয়ে তাতে জল দিয়ে এক দিন ভাল ভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর কোকো পিটকে পাত্র থেকে তুলে নিয়ে হালকা ভাবে চাপ দিয়ে অতিরিক্ত জল বার করে একটি পলিথিনের উপর রাখতে হবে। এবার কোকো পিট ও কেঁচো সার 2:1 (দুই ভাগ কোকো পিট এক ভাগ কেঁচো সার) অনুপাতে মিশিয়ে গ্রোথ মিডিয়াম বানাতে হবে। অনেক সময় কোকো পিটের বদলে 1:1 অনুপাতে ধানের তুষ ও কেঁচো সার ভাল ভাবে মিশিয়ে গ্রোথ মিডিয়াম তৈরি করে নেওয়া যায়। অথবা 1:1 তনুপাতে বালি (সাদা বালি) ও কেঁচো সার মিশিয়েও গ্রোথ মিডিয়াম তৈরি করা হয়।
<h3 style="color:seaGreen">চারা তৈরির পদ্ধতি</h3>
পরিষ্কার জলে প্লাগ ট্রে-গুলি ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গ্রোথ মিডিয়াম দিয়ে ভর্তি করে হাল্কা চাপ দিতে হবে যাতে গ্রোথ মিডিয়াম একেবারে বসে না যায়।
গ্রোথ মিডিয়ামে কাঠি দিয়ে বীজের প্রকৃতি অনুযায়ী (0.5-1 সেমি) গর্ত করে তাতে বীজ দিতে হবে। বীজের উপরে হাল্কা গ্রোথ মিডিয়ামের মিশ্রণ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এর পর ঝারির সাহায্যে হাল্কা জলসেচ দেওয়ার পর প্লাগ ট্রে-গুলি পলিথিন (4) দিয়ে দু-তিন দিন ঢেকে রাখতে হবে।<h3 style="color:seaGreen">চারার পরিচর্যা ও রোপণ</h3>
বীজ অঙ্কুরিত হয়ে গেলে পলিথিন খুলে ফেলুন। চারার বয়স এক সপ্তাহ হলে কপার অক্সিক্লোরাইড 50%, ডব্লুপি এক গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এতে চারার গোড়া পচা রোগ কম হবে। ঝারির সাহায্যে জলসেচ দেওয়ার সময় ঝারির জলে এন.পি.কে 19:19:19 মেশাতে হবে। চারার বয়স কম হওয়ার জন্য প্রতি লিটার জলে 2-3 গ্রাম হিসাবে এন.পি.কে 19:19:19 মেশাতে হবে। এর ফলে চারার বৃদ্ধি ভাল হবে। দরকারে অন্যান্য কীটনাশক ও রোগনাশক ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে। চারার বয়স তিন থেকে চার সপ্তাহ হলে (সব্জির জাত অনুযায়ী) ট্রে থেকে সার-সহ তুলে নিয়ে মূল জমিতে রোপন করতে হবে।
বীজতলায় বীজ ফেলে চারা তৈরি করলে অনেক সময় সব চারার বৃদ্ধি সমান হয় না। অনেক ক্ষেত্রে মাটিতে বসবাসকারী জীবাণু চারার মাধ্যমে মূল জমিতে চলে যায়। চারার নমনীয়তা কম হলে বীজতলা থেকে তোলার সময় চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাতে চারার মৃত্যুও হতে পারে। প্লাগ ট্রে থেকে চারা তুলে জমিতে রোপন করলে এই সমস্ত সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়। আবার মূল জমি তৈরি না হলে বা সেখানে জল জমে থাকলে প্লাগ ট্রে-তে আরও কিছু দিন চারাগুলির যত্ন নেওয়া যেতে পারে।<h3 style="color:seaGreen">চারার ব্যবসায় প্লাগ ট্রে</h3>
<div class="sos"><img src="http://docshunt.droppages.com/images/plugtray/2-1-3.jpg" alt="image" height="350" width="550" border="0"></div><br> স্বল্প খরচে তৈরী বাঁশের কাঠামোর উপর পলিথিন ও পাশে কীটরোধী নেট লাগিয়ে ফেলুন। এবার এর তলায় উঁচু বেড করে কালো পলিথিন পেতে তার উপর প্লাগ ট্রে রেখে চারা তৈরী করুন। বেডগুলো সাধারনত তিন ফুট চওড়া, ছয়-আট ইঞ্চি উঁচু হয়। দৈর্ঘ্য জমির মাপ অনুযায়ী হবে<br><br></p>
লেখক মালদহ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ।